Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

গল্প নয় সত্যি

খাদিজা খানম, জন্ম ১৯৭৯ সনে । ছোট থেকে বেড়ে উঠাটা ভালই কাটছিল । ১৯৯০ সালে পিতা: মারা যাওয়ায় জীবনটা অসমান হয়ে গেল । তিন বোন এক ভাই এর মধ্যে আমিই বড়। মা ও ছোট ভাই বোনদের নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটছিল । বাবা মারা যাওয়ার কিছু দিন পর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ঐ এলাকার এক ছেলের কাছে আমার বিয়ে হয় । বিয়ে হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় নানা ভাবে নির্যাতন নিপিড়ন । বিয়ের ১৫দিন পর ঐ অবস্থায় স্বামী বিদেশ চলে যায় । দেশে আসেন ১০ বছর পর । লেখাপড়াটা অনেক কষ্টে  ধরে রেখেছিলাম । শশ্বরবাড়ি থেকে বারবার বলেছিল লেখাপড়া যাতে না করি । বই পত্র বেঁধে বিক্রি করে ফেলতো কিন্তু অনেক কান্নাকাটি করার পর কোনমতে ১৯৯৫ সনে s.s.c পরীক্ষা দিয়েছিলাম। দ্বিতীয় বিভাগে পাশও করলাম । তার পর আরো লেখাপড়া করার আগ্রহ থাকায় কাপাসিয়া ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হই কিন্তু লেখাপড়া আর এগুলো পারিনি। তারপর বিভিন্ন অত্যাচার সহ্য করতে হয় । বাচ্চা না হওয়ায় আমাকে হেনস্তা করে ২০০৬ সালে বৈবাহিক বিচ্ছেদ হয়ে যায় । পড়ে গেলাম নতুন আর এক সমস্যায় । কি করব কিভাবে চলব ভেবে পাচ্ছিলাম না । ২০০৭ সালে একটা NGO তে চাকুরি নিই । তারপর ২০০৮ আবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই । বর্তমানে আমার ২ ছেলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। ২০১১ সালে চাকুরি ছেড়ে শুশ্বড় বাড়ি চলে আসি । ২০১৪ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যাল থেকে এইচ.এস.সি পাশ করি। বর্তমানে ডিগ্রিতে অধ্যায়নরত আছি ।

 

২০১১ সালে বেকারত্ব সমস্যায়  যখন ভূগছিলাম তখন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ২১ দিনের সেলাই প্রশিক্ষন নিয়ে ৩৫০০০/-টাকা ঋণ নিয়ে নতুন ভাবনায় পথচলা শুরু করি । এবং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ট্রেডে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহন করি । ১ টা সেলাই মেশিন ও কিছু কাপড় কিনে ব্যবসা করি । তারপর ব্যবসায় সাফল্য জন্য এস এম ই ফাউন্ডেশন থেকে ফ্যাশন ডিজাইন (৩ ধাপে প্রশিক্ষন নিই)। পর পর ব্লক বাটিক, ন্যাচারাল  ড্রাই, নকসী সেলাই বিষয়ক ও চামড়াজাত পণ্যের প্রশিক্ষণ নিয়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করি। তাছাড়া সমবায় একাডেমী, কুমিল্লা থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ক ও ব্লক বাটিক প্রশিক্ষণ এবং সমবায় আঞ্চলিক কার্যালয়, নরসিংদী  থেকে হিসাব ও নিরীক্ষা প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকি । যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ করাতে যেয়ে বেকার, দুঃস্থ অসহায় নারীদের আত্নকান্না শুনতে পাই । সবাই বলে আপা কিছু একটা করেন যেন ঘরে বসে কাজ করতে পারি । সেই চিন্তা মাথায় রেখে ২০১৩ সালে কাপাসিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে অসহায় ও দুঃস্থ নারীদের সঙ্গে নিয়ে একটি সংগঠন গঠন করে সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি । যাহা ২০১৬ সালে সমবায় অধিদপ্তর থেকে উদ্যোগ মহিলা সমবায় সমিতি নামে নিবন্ধন হয় । তারপর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর হতে উদ্যোগী নারী উন্নয়ন সংগঠন নামে নিবন্ধন হয় । যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর হতে একই নামে তালিকাভুক্ত করি এবং ২০১৭ সালে যুব উন্নয়ন হতে স্বীকৃতি পাই । ২০১৮ সালে যুব উন্নয়ন হতে জেলা পর্যায়ে  শ্রেষ্ঠ যুব পুরুস্কার পাই । কাযক্রম বৃদ্ধির লক্ষে আড়ং ,নীপুর, দেশি দশ ও ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের হস্ত শিল্প নকসী সেলাই বিষয়ক কাজ করি । যা প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে বসে কাজ করে । এখানে প্রায় ৫০০ জনের বেশী লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১৭ সালে জেডিপিসি থেকে পাট ও পাটজাত পন্য উৎপাদনের লক্ষে ২৫ জন বেকার যুব নারী ও পুরুষকে নিয়ে কাপাসিয়া উপজেলার বরুন গ্রামে একটি  প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করি । বর্তমানে পাট ও পাটজাত পন্য এলাকার চাহিদা মিটিয়ে জেডিপিসি ও দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করি থাকি । দেশের গ্রামীন  ঐতিয্য ধরে রাখতে তালপাতা, নারিকেল পাতা, কচুরিপানা ও কলাপাতা দিয়ে পাটি, হাত পাখা ও বিভিন্ন ধরণের হস্তশিল্প পণ্য তৈরি করে আড়ং, ডেকো গ্রুপ ও অন্যান্য ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করে থাকি । যেখানে প্রায় ৫০ জন বেকার নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে । আমার নিজের বেকারত্ব সমস্যা দূর করে প্রায় ৬০০জন বেকার নারী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি।